চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ ডিসেম্বরে
প্রকাশিত : ০৮:৪৬, ১১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ০৮:৪৬, ১১ আগস্ট ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়া ও বে টার্মিনাল পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। গতকাল রোববার (১০ আগস্ট) বন্দরের ৪ নম্বর ফটকে ব্যবহারকারীদের জন্য সেবা ডেস্ক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এমন তথ্য জানান।
গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব কনটেইনার টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এনসিটি পরিচালনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, লালদিয়ার টার্মিনালে নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালস, বে টার্মিনালের একটি প্রকল্পে ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং অন্যটিতে সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনালকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বর্তমানে এনসিটি পরিচালনা করছে নৌবাহিনী-অধীন চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেড। তবে বাকি তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ শেষ করে পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে বেসরকারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের।
অনুষ্ঠানে আশিক চৌধুরী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে বন্দরগুলোতে আমরা কিছু রূপান্তর করে দিয়ে যেতে চাই। কিছু চুক্তি সই করে দিতে চাই। এমন একটা জায়গায় আমরা নিয়ে যাব, যেখানে চাকা ঘোরানো শুরু করে দিলে এরপর এই চাকাটা থামানো সম্ভব হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার আসবে। তাদের থিতু হতে সময় লাগবে। ওই সময়ে যাতে কোনো কাজ থেমে না থাকে, সে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে একদম ওপরে নিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে আশিক চৌধুরী বলেন, বন্দরকে র্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে নিয়ে যেতে হলে আমাদের বেস্ট অপারেটর এখানে নিয়ে আসতে হবে। বন্দরে বেশ কিছু সংস্কার হচ্ছে। যেমন আমরা একটা সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছি। এটি দারুণ একটি উদ্যোগ। কেননা এর মাধ্যমে সবকিছু অটোমেটেড হয়ে যাবে। এ জন্য কার্যক্রম পরিচালনার সময়ও কম লাগবে। আগে সশরীর বন্দরে এসে কাগজ জমা দিয়ে যে কাজটি করতে হতো, সেটি এখন এক ক্লিকেই করা সম্ভব হবে। দুর্নীতি ও হেনস্তার যে অভিযোগ আগে শোনা যেত, সেসবও কমে যাবে। এ ছাড়া এক সময় হয়তো আমরা বন্দরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার দেখতে পাব।
বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আগে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য পরিচালনা করছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। বর্তমান পরিচালনা নিয়েও কথা বলেন আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেডকে হস্তান্তর করার পর প্রথম এক মাসে কনটেইনার ওঠানামার হার প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এটি বিরাট সাফল্য। আবার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সময় প্রায় ১৩ শতাংশ কমে এসেছে। গত অর্থবছরের এই টার্মিনালে ১৩ লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়েছে। যদি বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়, তাহলে বছর শেষে এটি বেড়ে ১ দশমিক ৭০ মিলিয়নে (১৭ লাখ) চলে যাবে।
আশিক চৌধুরী বলেন, সব মিলিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দরের সক্ষমতা চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া দেশ থেকে একটা পণ্য ইউরোপে নিয়ে যেতে বাড়তি সময় লাগে বলে আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারী ও দেশি রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে একটা অভিযোগ শুনি। একই পণ্য বাংলাদেশ থেকে নিতে যে সময় লাগে, ভিয়েতনাম থেকে নিতে তার চেয়ে তিন থেকে চার গুণ কম সময় লাগে। ২০৩০ সালের দিকে হয়তো ভিয়েতনামের চেয়ে কম সময়ে বন্দরের পণ্য খালাস হবে। আমরা ওদের থেকে বেটার হতে চাই।
অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন